বিষাক্ত রং-ভরা বাতাসে বুক ভরে প্রশ্বাস নিতে পারবেন তো?
সহস্র গ্যাস চেম্বার বিষাক্ত গ্যাসে পরিপূর্ণ। সামান্য কিছু অজুহাতেই সামাজিক পরিমণ্ডলে হু হু করে মিশিয়ে দেওয়া হচ্ছে সেই বিষাক্ত গ্যাস। উচ্চ শক্তি সম্পন্ন সেই ভাইরাস মিশ্রিত গ্যাস আমাদের বিবেকের স্নায়ুতন্ত্রকে নিরবে অসুস্থ করে দিচ্ছে, আমাদের রাষ্ট্র চেতনার উপর পড়ে যাচ্ছে ধর্মীয় উগ্রতার অবাঞ্ছিত আস্তরণ। এই উগ্র সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্পের আধার বা চেম্বার গুলো অন্য কিছু নয়, আমাদেরই ভোটে নির্বাচিত কিছু সাংসদ-বিধায়কগন। যাঁরা আজ ধর্মীয় উন্মাদনাকে রাজনীতির অাফিম রূপে ব্যবহার করে ক্ষমতা দখল করছেন। আর জনগন প্রশ্নাতীত ভাবে সেই উন্মাদনার নস্যি গ্রহণ করে ঝিমাচ্ছে।
সম্প্রতি বলিউড চলচ্চিত্রের একটি গানের ভিডিওকে কেন্দ্র করে সমগ্র ভারত উত্তাল,কতিপয় বিজেপি নেতা সদর্পে সেন্সর বোর্ডের আগেই প্রচার করে দিলেন যে, ঐ গানের দৃশ্যে দিপীকা যে রংয়ের বিকিকিনি পরিধান করেছেন তা হিন্দু ধর্মকে অপমান করেছে। এখানে রংয়ের মেরুকরণ ঘটে গেল। আবার মিডিয়া প্রকাশে দেখা যাচ্ছ, দিপীকার বিপরীতের চরিত্রকে প্রকাশ্য জ্যান্ত পুড়িয়ে মারার হুমকি দিচ্ছে। প্রশ্নটা হল, দিপীকা পাড়ুকনের পরিহিত বস্ত্রের রং যদি হিন্দু ধর্মের আঘাত স্বরুপ হয় তবে পুড়িয়ে মারার হুমকিটা তার জন্যই হওয়া স্বাভাবিক। কিন্তু পুড়িয়ে মারা হুমকি আসছে কেন শাহরুখ খানের প্রতি। এটা বুঝতে কারও কষ্ট করতে হবেনা, কারণ শাহরুখ খান মুসলিম। সাম্প্রদায়িকতা ছড়ানো তাদের মুল লক্ষ,তাই এখানে দিপীকা নয় শাহরুখই বলির পাঁঠা। যদি ঐ নেতৃত্বে মহোদয়গন এই অভিযোগ তুলতেন, যে চলচ্চিত্রের ঐ গানে উগ্র যৌনতা প্রদর্শন করা হয়েছে যা যুবসমাজকে বিপদগামী করবে এবং ধর্ষণ বৃদ্ধি পাবে। তাহলে তাদেরকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করা যেত। কিন্তু উদ্দেশ্য যখন সাম্প্রদায়িকতা ছড়ানো তখন ঐ ভাবনা ভাববে কে?
আমরা দেখেছি বিজেপির সাম্প্রদায়িক রাজনীতি গুজরাত দাঙ্গায় সফল হওয়ার পর তারা একের পরে এক সাম্প্রদায়িক অঘটন ঘটিয়ে চলছে। যেগুলো সুকুমার মতি হিন্দু সমাজে মুসলিম বিদ্বেষ তৈরী করছে। মসজিদ-মন্দির বিবাদ, স্থানের নাম পরিবর্তন, গোমাংস, টুকরে টুকরে গ্যাং, টিপু জন্মদিবস, হিজাব,লাভজেহাদ ইত্যাদি আরো অনেক ইস্যু বিষাক্ত ধোঁয়া রূপে বিজেপির রাজনীতির সুতিকা গৃহ থেকে নির্গত হয়ে সমাজকে কলুষিত করছে। বিভক্ত করা হচ্ছে মানুষের রাজনৈতিক অাকাঙ্খাকে।
এটা মনে রাখতে হবে, সাম্প্রদায়িক আগ্রাসন বা দাঙ্গা-হাঙ্গামা কোন কালেই ধর্মীয় প্রয়োজনে সংঘটিত হয় নি, এর পিছনে রয়েছে বা ছিল ষড়যন্ত্রকারীদের কুটিল রাজনৈতিক চক্রান্ত। ইতিহাসের পাতায় আমরা দেখেছি, যখন সমবেত ভাবে ভারতবাসী ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে সংগ্রামে উদ্বেল, 'ইংরেজ ভারত ছাড়ো' রবে মুখরিত ভারতের আকাশ বাতাস তখনই ব্রিটিশ শাসকগন ভারতে সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প ছড়াতে থাকে। ভারতীয় সমাজকে দ্বিধাবিভক্ত করে শাসনের নীতি গ্রহন করে। তখন একদল স্বার্থান্বেষী ব্রিটিশ শাসকদের সমর্থন করে ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনকে দুর্বল করতে সচেষ্ট হয়। সেই ব্রিটিশ শাসকদের বিভেদ নীতির ভাবশিষ্য আজকের বিজেপি। তারা ভারতের রাজনৈতিক ঐতিহ্যকে বদলে দিতে চায়ছে, তাই মহাত্মা গান্ধী নয় সাভারকারকে রাজনৈতিক ভাবে নমস্য করছে। অথচ আমরা যদি পিছন ফিরে আরো তাকায়, সমগ্র ভারতবর্ষ যখন মুঘল শাসনাধীন ছিল, তখন সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ঘটেছিল, এ কথা কেউই হলফ করে বলতে পারবেনা।
পরিশেষে উল্লেখ্য যে, রং না শাহরুখ - কে আক্রমণের লক্ষ্যবস্তু? শাহরুখ না হয়ে যদি ঐ স্থানে সুখেন্দু হত তবে,ঐ বিকিকিনির রং কি ধর্মীয় মর্যাদা পেত? শাসকের কাজ প্রজামঙ্গল তথা দেশের উন্নয়ণ এবং প্রজাদের বৈশ্বিক ও আত্মিক বিকাশ। দু:খের বিষয়, এখন শাসকের রাজধর্ম সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ ছড়ানো। আর সেই চক্রান্তের বাষ্পে বাতাস ভরে গেছে, এক্ষুনি সচেতন না হলে এই বিষময় বায়ুমন্ডল হতে বুক ভরে প্রাণবায়ু নিতে পারবেন তো?
মহম্মদ ঘোরী শাহ্, গড়বেতা,পশ্চিম মেদিনীপুর
0 Comments